এই প্রতিবেদনে বাক্য কাকে বলে ও বাক্যের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রতিবেদনে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাক্যের সমস্ত প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা রাখছি এই প্রতিবেদন ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও ভালো লাগবে।
Table of contents: |
বাক্য কাকে বলে?
কতকগুলি পদ বা শব্দ পাশাপাশি বসে যদি একটি সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে বাক্য বলে।
উদাহরণের সাহায্যে বোঝার চেষ্টা করি:
রাম হয় একটি ভালো ছেলে। এই বাক্যটিতে কতকগুলি শব্দ পাশাপাশি বসে রাম কেমন ছেলে তা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করছে। তাই এটি একটি বাক্য। কিন্তু যদি বলি - রামের চারটি কান রয়েছে। এই বাক্যটি ব্যকরণের দিক থেকে ঠিক হলেও অর্থের দিক থেকে বাক্য হতে পারে না। কারন একটা মানুষের চারটি কান থাকতে পারে না। তাই আমরা বলতে পারি -
কতকগুলি পদ বা শব্দ পাশাপাশি বসে যদি একটি সম্পূর্ণ এবং যুক্তিপূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে আমরা বাক্য বলি।
বাক্যের প্রকারভেদ
বাক্যের প্রকারভেদকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। যথা ১. ভাব প্রকাশের প্রণালী অনুযায়ী এবং ২. গঠনগতভাবে।
১. ভাব প্রকাশের প্রণালী অনুযায়ী বাক্যের প্রকারভেদ
আমাদের মনের যাবতীয় ভাব বা মানসিক চিন্তভাবনা প্রকাশের জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের বাক্যের সাহায্য নিয়ে থাকি। ভাব প্রকাশের প্রণালী অনুযায়ী মূলতঃ বাক্যকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা -
(ক) বিবৃতিমূলক বাক্য
(খ) প্রশ্নবোধক বাক্য
(গ) অনুজ্ঞাবাচক বাক্য
(ঘ) ইচ্ছা, প্রার্থনা বা আশীর্বাদ প্রকাশক বাক্য
(ঙ) আবেগ বা বিস্ময়সূচক বাক্য
(ক) বিবৃতিমূলক বাক্য
যে বাক্যের মাধ্যমে সাধারণভাবে কোনও কথা বিবৃত বা বর্ণনা করা হয়, তাকে বিবৃতিমূলক বাক্য বলে।
যেমন - ১. ভারত ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগষ্ট স্বাধীনতা লাভ করে।
২. শ্যাম প্রতিদিন স্কুলে যায়।
(খ) প্রশ্নবোধক বাক্য
যে বাক্যের মাধ্যমে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়, তাকে প্রশ্নবোধক বাক্য বলে।
যেমন - ১. আমি কি ভিতরে আসতে পারি?
২. কে তোমাকে এই কাজটি করতে বলেছে?
(গ) অনুজ্ঞাবাচক বাক্য
যে বাক্যের মাধ্যমে আদেশ, অনুরোধ ও উপদেশ প্রভৃতি বোঝানো হয়, তাকে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য বলে।
যেমন - ১. বইটি পড়ো। (এই বাক্যটিতে বইটি পড়ার জন্য আদেশ করা হচ্ছে।)
২. দয়া করে আমাকে একগ্লাস জল দাও। (এই বাক্যটিতে অনুরোধ করা হচ্ছে।)
৩. সর্বদা সত্য কথা বলবে। (এই বাক্যটির মাধ্যমে উপদেশ দেওয়া হচ্ছে।)
(ঘ) ইচ্ছা, প্রার্থনা বা আশীর্বাদ প্রকাশক বাক্য
যে বাক্যের মাধ্যমে বক্তার ইচ্ছা, প্রার্থনা কিংবা কোনও ব্যক্তির ওপর তার আশীর্বাদের ইচ্ছা প্রকাশ পায়, তাকে ইচ্ছা, প্রার্থনা বা আশীর্বাদ প্রকাশক বাক্য বলে।
যেমন - ১. ঈশ্বর তোমাকে আশীর্বাদ করুন। (এই বাক্যে আশীর্বাদ প্রকাশ করছে।)
২. তার আত্মা শান্তি লাভ করুক। (এই বাক্যে প্রার্থনা প্রকাশ করছে।)
৩. আমি যদি পাখির মতো উড়তে পারতাম! (এই বাক্যে বক্তার মনের ইচ্ছা প্রকাশ পাচ্ছে।)
(ঙ) আবেগ বা বিস্ময়সূচক বাক্য
যে বাক্যের মাধ্যমে বক্তার মনের আনন্দ, আবেগ, বিস্ময়, দুঃখ, হতাশা প্রভৃতির মতো প্রবল আবেগ প্রকাশিত হয়, তাকে আবেগ বা বিস্ময়সূচক বাক্য বলে।
যেমন - ১. আহা! আমরা দাবা খেলায় জিতেছি (এই বাক্যে বক্তার মনের আনন্দ প্রকাশ পাচ্ছে।)
২. কি সুন্দর চাঁদ! (এই বাক্যে বক্তার মনের আবেগ প্রকাশ পাচ্ছে।)
৩. কি বিশাল হিমালয় পর্বত! (এই বাক্যে বক্তার মনের বিস্ময় প্রকাশ পাচ্ছে।)
৪. হায়! আমরা মারা পড়লাম! (এই বাক্যে বক্তার মনের দুঃখ প্রকাশ পাচ্ছে।)
৫. হায়! আমরা কি গরীব! (এই বাক্যে বক্তার মনের হতাশা প্রকাশ পাচ্ছে।)
২. গঠনগতভাবে বাক্যের প্রকারভেদ
গঠনগতভাবে বাক্যকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা -
(ক) সরল বাক্য
(খ) যৌগিক বাক্য
(গ) জটিল বাক্য
(ক) সরল বাক্য কাকে বলে
যে বাক্যে একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া এবং একটি মাত্র কর্তা থাকে তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন -
১. আমি ভাত খায়। (এই বাক্যটিতে একটি সমাপিকা ক্রিয়া ‘খায়’ ও একটি মাত্র কর্তা ‘আমি’ আছে। তাই এই বাক্যটি একটি সরল বাক্য।)
(খ) যৌগিক বাক্য কাকে বলে
যে বাক্যে দুই বা তার বেশি স্বাধীন বাক্য থাকে, তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যেমন -
১. সে হয় গরীব কিন্তু সে হয় সৎ। (এখানে দুটি স্বাধীন বাক্য ‘সে হয় গরীব’ ও ‘সে হয় সৎ’ যুক্ত হয়ে সংযোজক অব্যয় ‘কিন্তু’ দ্বারা। তাই এই বাক্যটি একটি যৌগিক বাক্য।)
(গ) জটিল বাক্য কাকে বলে
যে বাক্যে একটি স্বাধীন বাক্য এবং এক বা একের বেশি স্বাধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল বাক্য বা বাক্যাংশ থাকে, তাকে জটিল বাক্য বলে। এই বাক্যে একের বেশি সমাপিকা ক্রিয়া ও একের বেশি কর্তা থাকে। যেমন -
১. আমি কিনেছিলাম একটা জামা যেটার রং ছিল হলুদ। (এই বাক্যটিতে ‘আমি কিনেছিলাম একটা জামা’ এটা হল স্বাধীন বাক্য এবং ‘যেটার রং ছিল হলুদ’ এটা হল স্বাধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল বাক্য। নির্ভরশীল বাক্য কখনই স্বাধীন বাক্য ছাড়া সম্পূর্ন অর্থ প্রকাশ করতে পারে না। তাই পুরো বাক্যটিই হল একটি জটিল বাক্য।)
আপনার মূল্যবান সময় ‘অপচয়’ করে এই প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত অবশ্যই নীচে কমেন্টে জানান। ধন্যবাদ
Tags:
Grammar